বৃহস্পতিবার, ৭ জুন, ২০১২

সবুজ অর্থনীতিতে আমাদের ভূমিকা



আ লী  ই মা ম
পৃথিবী জুড়েই পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে এখন বিরাজ করছে প্রবল উত্কণ্ঠা। প্রতিমুহূর্তে বাড়ছে উদ্বেগ। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী তৈরি হচ্ছে। সেসব ছবি দেখে আতঙ্কে শিউরে উঠছে মানুষ। কীভাবে তিলে তিলে পৃথিবীকে হত্যা করা হচ্ছে তার বিশদ ব্যাখ্যা করে অসংখ্য প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, যেখানে মানুষকে চিহ্নিত করা হয়েছে ঘাতকের ভূমিকায়। অপরিণামদর্শী বন উজাড়ে বিপন্ন পরিবেশকে চিত্রায়িত করা হয়েছে।
’৭৩ সালেই রিওতে অনুষ্ঠিত প্রথম ধরিত্রী সম্মেলনে ‘আমাদের গ্রহটিকে রক্ষা করুন’ বলে আর্তনাদ উচ্চারিত হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ‘সেভ আওয়ার প্ল্যানেট’। সেটি ছিল বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেওয়ার এক প্রয়াস। মানুষের ঘুমিয়ে থাকা চেতনাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা। ধারণা করা হয়েছিল পরিবেশগত কারণে পৃথিবী যে মারাত্মক সঙ্কটের মাঝে নিপতিত হতে চলেছে সে বিষয়ে মানুষের সচেতনতা আসেনি। মানুষ চিন্তাই করতে পারছে না সঙ্কট কত প্রচণ্ডভাবে ধেয়ে আসছে। তখন নীতিনির্ধারকরা বিশ্ববাসীকে সমস্যাটি সম্পর্কে সচেতন করার শুভকর প্রয়াস নিয়েছিল। কল্যাণব্রতে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিল। সকলকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হল, যেন পৃথিবী নামক গ্রহটিকে রক্ষা করার জন্য সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। যারা পৃথিবীর আলো-বাতাস থেকে জীবনীশক্তিকে আহরণ করছে তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। কিন্তু বিগত সময়ে তার কোনো প্রভাব আমরা দেখিনি। বরং পরিবেশের ক্রমাগত অবনতি হয়েছে। উষ্ণায়নজনিত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর সকল প্রাণিকুলের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। সমস্যা এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে, গ্রহটি এখন মুমূর্ষু অবস্থায়। বলা যেতে পারে মৃত্যু যন্ত্রণায় ধুঁকছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নামে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদকে। সবুজ প্রকৃতিকে বিলীন করা হয়েছে। গ্রিনহাউস গ্যাসের ব্যাপক নিঃসরণ সৃষ্টি করেছে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি। পৃথিবীর শরীরে এখন বিরাজ করছে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা। যার দরুন ভেঙে পড়েছে পৃথিবীর খাদ্য-শৃঙ্খল ব্যবস্থা। খরাক্রান্ত জনপদগুলো ফসলহীনতায় বিপর্যস্ত। জীবনযাপন ক্লিষ্ট।
আফ্রিকার বিশাল অঞ্চল জুড়ে যখন প্রচণ্ড খরা জীবনকে মুমূর্ষু করে ফেলেছিল, তখন খাদ্যাভাবে জর্জরিত, অপুষ্টির শিকার মানুষজনের করুণ মুখাবয়ব দেখিয়ে মিডিয়াতে আবেদন করা হয়েছিল তাদের বাঁচানোর জন্য। বায়াফ্রার খরাপীড়িত জীবনের বিমর্ষ ছবি বিশ্ববাসীকে বিচলিত করেছিল। আয়োজন করা হয়েছিল লাইভ কনসার্টের, যাতে অংশগ্রহণ করেছিল পৃথিবীর সর্বাধিক জনপ্রিয় শিল্পীরা। সমস্ত পৃথিবীতে সম্প্রচারিত হয়েছিল সেই অনুষ্ঠান, যাতে আবেদন করা হয়েছিল- ওইসব অভুক্ত মানুষকে বাঁচাতে আপনিও এগিয়ে আসুন। আমরা যে সবাই একটি গ্রহের অধিবাসী এই বোধটাকে জাগানোর চেষ্টা। গ্রহের অধিবাসীরা বিপন্ন হলে সমবেত প্রয়াস নিতে হবে তা থেকে উত্তরণের। পৃথিবীকে একসূত্রে গাঁথার এটি এক প্রয়াস ছিল। এতে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। এই বোধ জাগ্রত হয়েছিল যে, মানুষ মানুষের জন্য।
পরিবেশের বিপন্নতা ক্রমাগতভাবে মানুষকে সঙ্কটে নিক্ষেপ করেছে। ঋতুবৈচিত্র্য পরিবর্তিত হয়েছে। জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হয়েছে। বনভূমি উজাড় হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় বনভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। আরণ্যক অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীনকালে আমাদের অঞ্চলে কাঠ সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট কিছু বনভূমি ছিল, সেগুলো পরিচিত ছিল দ্রব্যবন বলে। গজবন ও অটবি অর্থাত্ গুল্মজাতীয় জঙ্গলের অঙ্গছেদন নিষিদ্ধ ছিল। প্রাচীন ভারতের একজন অতি বিখ্যাত রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ছিলেন কামন্দক। তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ নীতিশাস্ত্রে প্রশ্ন করেছেন, ‘কোন রাজাকে অধিকতর শ্রেষ্ঠ বলা যাবে, যে রাজ্যে কণ্টকবন আছে সেই রাজ্য, নাকি যে রাজ্যে কুঞ্জবন আছে সেই রাজ্য?’ এর উত্তরে তিনি বলেছেন যে, যে রাজ্যে কুঞ্জবন আছে সে রাজ্যই অধিকতর শ্রেষ্ঠ। কৌটিল্যও তার বিশ্ববিখ্যাত অর্থশাস্ত্রে অরণ্যকে দেখতে চেয়েছেন প্রধানত অর্থনীতির প্রেক্ষিতেই। সে কারণে বনের বৃক্ষরাজি সম্পর্কে বনকর্মীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী হওয়া উচিত তা তিনি বলেছেন। বন্যপ্রাণীদের ক্ষেত্রেও তিনি তার অর্থনৈতিক বক্তব্য পেশ করেছেন।
খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ শতাব্দীতে পুরাণে ব্রহ্মাণ্ড খণ্ডে এসব অঞ্চল সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘একদিকে তুঙ্গভূমি সংলগ্ন বরাহভূমি এবং অন্যদিকে শেখর পর্বত। এই দেশ বরাহভূমি, সামন্তভূমি ও মানভূমি নিয়ে গঠিত। এ দেশ জুড়ে রয়েছে প্রধানত শাল ও অন্যান্য গাছের দুর্ভেদ্য জঙ্গল।
বরাহভূমির সীমানা ঘেঁষে নদী বয়ে যাচ্ছে। এটা এমন এক দেশ যেখানে সর্বত্রই নিবিড় বনভূমি। এখানের বনভূমি বহুদূর পর্যন্ত প্রসারিত এবং এই বনে অর্জুন ও শালগাছ অজস্র। ঝোপঝাড়ও আছে প্রচুর পরিমাণে। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত তাম্রলিপ্তি ছিল গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। স্থানটি বর্তমানের পশ্চিমবঙ্গের তমলুক। সম্রাট অশোকের অনুশাসন থেকে জানা যায়, তৈলকুপি নামে একটি স্থান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অত্যন্ত ঘন জঙ্গল এবং শবর নামে অরণ্যচারী মানুষে পরিপূর্ণ। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদে এই শবর জাতির কথা রয়েছে। আমাদের দেশের প্রখ্যাত লেখিকা সেলিনা হোসেন এই শবরদের নিয়ে উপন্যাস লিখেছেন, ‘নীল ময়ূরীর যৌবন’।
সে সময় অরণ্য সংরক্ষণ ও সৃজনের ওপর অরণ্যনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন রকমের বনজ সম্পদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নতুন নতুন বনভূমি তৈরি করতে নানারকম গাছপালা লাগানোর আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল, যেখানে বিনানুমতিতে প্রবেশ করলে কঠিন সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। বিধান দেওয়া হয়েছিল হস্তী নিধনকারীকে হত্যা করার। শুধু হাতিই নয়, যে কোনো নিরীহ বন্যপ্রাণীকে হত্যা, এমনকি বিরক্ত করাও ছিল অমার্জনীয় অপরাধ। ক্রৌঞ্চ, উেক্রাশক, দাত্যু, হংস, চক্রবাক, ভৃঙ্গরাজ, চকোর, মত্তকোকিল, ময়ূর, শুক, মদনসারিকা ইত্যাদি পাখি মারা কিংবা ধরা সম্পূর্ণ বেআইনি ছিল। যেসব বনে পশু-পাখি শিকারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সেগুলোকে নাগবন বলা হতো। এসব বনেও শিকার করতে হলে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হতো। যেমন শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদে অর্থাত্ বছরে মোট ৭২ দিন বন্যপ্রাণী শিকার করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল।
বিনয়পিটক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সে যুগে এমন বেশকিছু সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছিল যেখানে গাছ কাটা তো দূরের কথা, অকারণে প্রবেশ করাটাও ছিল দণ্ডনীয় অপরাধ। অরণ্যনীতি বলিষ্ঠ ও সুবিবেচনাপ্রসূত ছিল। সেই বনভূমি মানুষের লোভে এবং অপরিণামদর্শিতার কারণে উজাড় হয়েছে। বিশ্বে মানুষের ৭০ ভাগ পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে সাতটি বর্গের উদ্ভিদ। এগুলো হল ধান, গম, ভুট্টা, আলু, বার্লি, মিষ্টি আলু ও কাসাভা। এর মধ্যে প্রথম তিনটিই ৫০% পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। 
মানুষের স্বার্থপরতায় শত শত প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়েছে। প্রকৃতির বিচারে যারা যোগ্য বলে বিবেচিত তাদের বেঁচে থাকার বিপক্ষে নেমেছে মানুষ। বিনাশ ক্ষমতা মানুষের অতুলনীয়। প্রতিঘণ্টায় তার হাতে একটি করে প্রজাতি নির্মূল হয়। আরণ্যক ও মনুষ্যলালিত জীববৈচিত্র্য আজ চূড়ান্তভাবে বিপর্যস্ত।
বিশ্বে এক কোটি সত্তর লাখ হেক্টর বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে আর তার পরিবর্তে মাত্র এক লাখ হেক্টর বনায়ন করা হচ্ছে। প্রতিমিনিটে পৃথিবীতে প্রায় একশ’ একর ক্রান্তীয় বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক রেইন ফরেস্ট উত্পাটিত করা হয়েছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এই বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই বৃক্ষনিধনের হার বাড়ছে। নগরায়ণের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে কমে যাচ্ছে বৃক্ষের স্থান। প্রতিবছর প্রায় ৪০ মিলিয়ন একর বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেলে তা বিশ্বের ইকো সিস্টেমের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। কোনো বর্গ বা গোত্রের উদ্ভিদ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেলে এর ওপর নির্ভরশীল প্রাণী বা কীটপতঙ্গও নিশ্চিহ্ন হবে। এতে খাদ্য-শৃঙ্খলাচক্র ভেঙে পড়বে।
আমাদের দেশের বনাঞ্চল বিনষ্টি মারাত্মক সমস্যার রূপ নিচ্ছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। দেশের জাতীয় আয়ের শতকরা পাঁচ ভাগ বনভূমি থেকে এলেও আমাদের দেশের ২৮টি জেলায় এখনও কোনো রাষ্ট্রীয় বনভূমি নেই। দেশের শতকরা ৬০ ভাগ জ্বালানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ইটের ভাটাগুলো চালু রাখার জন্য যথেচ্ছভাবে গাছ কাটা হচ্ছে। দেশের পাহাড়গুলো ক্রমশ বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে।
কোনো দেশের জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হয় মূলত সে দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার কারণে। ক্রমবর্ধমান ভোগবিলাস মেটাতে শহরের শিল্পগুলোই হয়ে পড়ে অরণ্যের নিয়ন্ত্রক। অনিয়মই তখন আইনের ছত্রছায়ায় নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। ধনাঢ্যদের ভোগ তৃষ্ণার কারণে জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়। ধনী দেশগুলো নানাভাবে গরিব দেশগুলোকে তাদের ভোগ্য বস্তুর রসদ জোগাতে বাধ্য করে। দেশের জীবসম্পদ না বেচে তখন গরিব দেশগুলোর উপায় থাকে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কফির চাহিদা মেটাতে ব্রাজিল তার সুনিবিড় আমাজান বনের এক কোটি আশি লাখ হেক্টর নির্মূল করতে বাধ্য হয়েছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আমাজান অরণ্যকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। জার্মানির কাঠের জোগান দিতে গিয়ে নিরক্ষীয় অঞ্চলের একাধিক দেশের সমৃদ্ধ বনভূমি প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ হেক্টর পরিমাণে বনহীন হয়। এভাবে অনেক দেশের বহু বনাঞ্চলই ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ লিস্টার ব্রাউন বলেছেন, অর্থনীতির সঙ্গে এসব জৈবতন্ত্রের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। বিশ্ব অর্থনীতির যত প্রসার ঘটছে, ততই এগুলোর ওপর চাপ পড়ছে। বিশ্বের ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে মানুষ বাস্তুসংস্থানের ওপর অধিকার খাটাতে চায়। চায় এর ওপর কর্তৃত্ব ফলাতে। যার ফলে বাস্তুসংস্থানিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। পরিস্থিতির এমন অবনতি ঘটে যে, জৈবতন্ত্রগুলোর উত্পাদনশীলতা দ্রুত কমে যায়। ফলে জলাশয় থেকে মাছ, বন থেকে বনজ গাছ ও প্রাণী সব উধাও হয়। তৃণভূমি হয় তৃণহীন।
কৃষিক্ষেত্র থেকে বিদায় নেয় কৃষি। আর সেই সঙ্গে পানি, বাতাস ও প্রকৃতির অন্যান্য অবদান। যেগুলো ছাড়া জীবনধারণ অসম্ভব, সেগুলোরও দ্রুত অবক্ষয় ঘটে। এরকম প্রেক্ষাপটে গত ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ পালিত হল।
’৭৩ সালের রিওর ধরিত্রী সম্মেলনে যেভাবে সমগ্র বিশ্ববাসীকে গ্রহ বাঁচানোর আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার উদাত্ত আহ্বান ছিল, এবারও বিশ্ববাসীকে একটি তীক্ষ প্রশ্নের আওতায় আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, সবুজ অর্থনীতি নির্মাণে আপনি অন্তর্ভুক্ত তো? পরিবেশ ভাবনায় এখন তাই সবুজ দর্শন গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। সবুজ অর্থনীতির ফলাফল পরিবেশের ওপর ঝুঁকি বাড়াবে না। প্রতিবেশে ঘাটতি বাড়াবে না। এতে সামাজিক সমতার উন্নয়ন হবে। জীবনযাপনের মান উন্নয়ন হবে। তাই সবুজ অর্থনীতিতে সমাজের প্রতিটি মানুষকে সম্পৃক্ত করানোর জন্য প্রশ্ন করা বর্তমান সময়ে অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। সবুজ অর্থনীতিতে পরিবেশগত ঝুঁকি কমিয়ে সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠা করা যায়। মাত্রাতিরিক্ত পরিবেশ দূষণে জমি হারাচ্ছে উত্পাদন ক্ষমতা। খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে।
আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে এখন তাই আমাদের এ ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা আমাদের পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার ধারাবাহিক চিত্রকে অনুসন্ধান করতে পারি। এক যুগ আগেও ঢাকার আশপাশে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জমি ছিল সবুজে ঢাকা। এলাকাগুলো ধূসর হয়েছে নগরায়ণের নামে। নিম্নভূমি ও জলাভূমি ভরাট করায় নগরের তাপমাত্রা বেড়েছে। ঢাকার ৩৫৩ বর্গ কিমি এলাকার মাঝে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ মাত্র ৩৫ বর্গ কিমি। জলাভূমির পরিমাণ ৭০ বর্গ কিমি। আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে জলাশয়। সবুজের অবসানে ধূসর হয়েছে পরিবেশ।
বর্তমানের প্রেক্ষাপট উদ্বেগজনক। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যগত ও খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের আঘাত হানছে। এমনকি দ্রুত বর্ধনশীল এই সঙ্কট নতুন প্রজন্মের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা সবুজ অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে ভাবছি। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি। রিসাইকেলিং। এতে পরিবেশ দূষণের পরিমাপ কম। এ জন্য উন্নত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন। মিষ্টি পানির অপচয় সর্বতোভাবে বন্ধ করা এবং তার যথাযথ ব্যবহার সবুজ অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এখন মিষ্টি পানির উত্স ক্রমাগতভাবে সঙ্কুচিত হচ্ছে। পৃথিবীর অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদ এই মিষ্টি পানির ওপরই নির্ভরশীল। এখন যখন প্রশ্ন করা হয়েছে সবুজ অর্থনীতিতে আমি অন্তর্ভুক্ত কি না, তখন তো এই মিষ্টি পানি সংরক্ষণে আমাদের ভূমিকাকে আরও কার্যকর করতে পারি।
আমাদের আসলে এখন গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে কতটা ভূমিকা আমরা রাখতে পারব। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার জন্য আমাদের কতটা সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে। 
‘সব গ্রহকেই শুঁকলো মানুষ নিষ্প্রাণ, নির্জল 
কেবল আমার জগত্টাতেই মায়াবী কম্বল। 
বাতাসবায়ু বৃষ্টিধারা চিরহরিত্ ঘাস 
পাখির উড়াল প্রাণের কাঁপন মানুষের নিঃশ্বাস।’
লেখক : শিশুসাহিত্যিক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন