বৃহস্পতিবার, ৩১ মে, ২০১২

এই ধরিত্রী আমাদেরই অংশ



আ লী  ই মা ম
চরম অবিবেচক হিসেবে রোম সম্রাট নিরোর পরিচিতি ছিল। তার খামখেয়ালিপনাজাত স্বভাব এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ নিয়ে প্রচুর কাহিনী প্রচলিত আছে। অন্যজনের প্রতি পীড়াদায়ক ব্যবহার করে বিকৃত মানসিকতার তৃপ্তি পেতেন তিনি। মনোবিদদের ধারণা তিনি একজন মর্ষকামী ছিলেন। তার উদ্ভট আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয়েছিল সেই বহুল প্রচারিত উক্তিটি, ‘রোম নগরী যখন পুড়ছে সম্রাট নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন।’
কথাটি নতুন করে মনে এল যখন অসহায়ের মতো আমাদের বসবাসের স্থান বিপন্ন গ্রহটিকে প্রত্যক্ষ করছি। সাম্প্রতিক সময়ের বিবিধ ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করে এই চিন্তার উদ্রেক হয়েছে। পৃথিবী নামের গ্রহটি যখন প্রচণ্ড তাপদাহে রীতিমতো পুড়ছে তখন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কতিপয় নীতিনির্ধারক-দেশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। কূটকৌশলে চিহ্নিত সমস্যাগুলোর সমাধানের উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সমস্যা সৃষ্টিকারী উন্নত দেশগুলো যেন নিরোর মতোই দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিচ্ছে। কার্বন নিঃসরণে ও গ্রিনহাউস গ্যাসের জন্য ওজোন স্তরে গর্ত হওয়াতে যে ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধানের জন্য কার্বন (সিএফসি) নিঃসরণের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করার কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে না। গ্রহটিকে বাঁচানোর জন্য ঐকমত্যেও আসা সম্ভবপর হচ্ছে না। সুকৌশলে সমস্যাটিকে অনেকটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আমাদের গ্রহের এই মারাত্মক বিপর্যয় যেহেতু তাদের যাপিত জীবনযাত্রাকে ততটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে না তাই তারা নিস্পৃহতার পরিচয় দিচ্ছে। যেন তাপের আঁচ তাদের গায়ে লাগছে না। আবহাওয়া বৈরী আচরণ করছে। অসহনীয় এক পরিবেশে আমরা প্রতিনিয়ত বিপর্যস্ত হচ্ছি। পরিবেশবিদদের মতে, যদি দ্রুত দেশে পরিবেশবান্ধব পরিস্থিতি সৃষ্টি করা না-যায় তা হলে আমাদের দেশ বসবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়বে। এই গ্রীষ্ম তীব্র তাপদাহে আক্রান্ত। বাংলাদেশে প্রতিবছর ০.০০৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় প্রায়ই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠছে। এ প্রবণতা আগামী দিনগুলোতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। আমাদের দেশটি পরিচিত ছিল নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার দেশ বলে। কিন্তু প্রেক্ষাপট এখন পালটে গেছে। বিশ্বাসের পরিবর্তন হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের তাপমাত্রার অস্বাভাবিক আচরণ সেই পরিচিতিকে ম্লান করে দিয়েছে। ১৯৬০ সালে আমাদের দেশে সর্বোচ্চ ৪২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নথিভুক্ত করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে ৪৫ দশমিক ১ এবং নব্বইয়ের দশকে নথিভুক্ত হয় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমানে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা অত্যধিক বেশি।
আমরা বর্তমান সময়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে যে ভয়াবহ সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছি তাতে আবহাওয়াবিদদের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। যে পরিবেশ ব্যবস্থা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে তার প্রেক্ষাপট আবিষ্কার করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছি আমরা। জানা গেছে, গত ৫০ বছরে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দশমিক ৫ শতাংশ। এমনকি ২০৫০ সালে বাংলাদেশের তাপমাত্রা গড়ে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২১০০ সাল নাগাদ এই হিসাবে ২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে এই বাড়তি তাপমাত্রায় পানির বাষ্পীভবন বেড়ে যাবে এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে। আর্দ্র বাতাসের প্রভাবে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। বাংলাদেশের আর্দ্রতার মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণ মানুষ তথ্য-উপাত্তের এই হিসাব-নিকাশ না জানলেও এটুকু বুঝতে সক্ষম যে জীবনপ্রবাহ বিপর্যস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হয়েছে আমাদের দেশটি।
আমাদের এ পৃথিবীটা হল একটি সবুজ ঘর এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের স্তর ঘরের চারপাশের একটি কাচের দেয়াল। সূর্যের যেসব রশ্মি এ কাচের দেয়াল ভেদ করে পৃথিবীর উপরিভাগকে উত্তপ্ত করে, এ স্তর বা কাচের দেয়াল সেই তাপকে বাইরে বেরিয়ে যেতে বাধা দেয়। এর পরিমাণ বা ঘনত্ব যত বৃদ্ধি পাবে পৃথিবী থেকে তাপ ততই কম নির্গত হবে। যার ফলে পৃথিবী দিন দিন আরও বেশি উত্তপ্ত হবে।
বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়েছে। চরম অবস্থায় এসেছে আর্দ্রতা। পানির স্তর নেমে গেছে নিচে। অঞ্চলভিত্তিক অসম বৃষ্টিপাত হয়েছে। জলবায়ুর বিরূপতার সঙ্গে আমাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা কম। কিন্তু ভুক্তভোগী আমরা বেশি। আমরা ভুক্তভোগী কারণ পৃথিবীতে সুবিধাভোগী দলটির যথেচ্ছ অনধিকারচর্চায় সম্পদগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর অধিকাংশ সম্পদ ভোগ করছে স্বল্প কয়েকটি দেশ। বেশিরভাগ দেশ বঞ্চিত। পৃথিবীর সাধারণ প্রাকৃতিক সম্পদগুলোও এখন একক কোনো গোষ্ঠী বা দলের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হয়েছে। সম্পদগুলো হচ্ছে পৃথিবীর বিস্তীর্ণ ভূমি, নীল আকাশ, পাহাড়-পর্বত, নদী-সমুদ্র, জলাশয়। এসব সম্পদের প্রাণশক্তিকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে সুবিধাভোগী গোষ্ঠী, যার খেসারত দিতে হয়েছে পৃথিবীর বহু ভূখণ্ডকে। যেমন আমাদের এখন দিতে হচ্ছে। এই চরম সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর মানসিকতাকে চিহ্নিত করেছিলেন প্রখ্যাত পরিবেশবিদ অধ্যাপক হার্ডিন। ১৯৬৮ সালে একটি বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নালে হার্ডিন তার এই ধারণাটিকে তুলে ধরেন। তিনি দেখিয়েছিলেন, মধ্যযুগে ইউরোপের বহুবিস্তীর্ণ চারণভূমি পড়ে থাকত উন্মুক্ত। স্বার্থান্বেষী মানুষ তাদের সুযোগ-সুবিধার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত এই ভূমি মাত্রাতিরিক্তভাবে ব্যবহার করত, যতক্ষণ পর্যন্ত চারণভূমিটি তার উর্বরা শক্তি হারিয়ে রুক্ষ না হয়ে যেত। এরপর তারা চলে যেত অন্য কোথায়ও। তখন স্বাভাবিকভাবেই সেই রুক্ষ ভূমির দায় এসে পড়ত নির্দোষ মানুষ জাতির ঘাড়ে। হার্ডিনের ব্যাখ্যার করুণ সুরটিকে এখন আমরা যেন শুনতে পাচ্ছি। আমাদের প্রতিবেশ এখন সঙ্কটাপন্ন এলাকা বলে চিহ্নিত। কাদের দোষে? উন্নত দেশগুলো তাদের উন্নয়ন ও আকাশছোঁয়া সমৃদ্ধির জন্য কুক্ষিগত করেছে পৃথিবীর সেসব সাধারণ সম্পদগুলোকে, যার প্রতি অধিকার ছিল সব মানুষের। এর ফলে আমাদের মতো দেশগুলো বিপন্ন হয়েছে। দায় নিতে হচ্ছে উন্নয়নকামী দেশগুলোকে, তাদের দরিদ্র মানুষগুলোকে- যারা হয়ত এই জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত নয়। কিন্তু তাদের প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলতে হচ্ছে এর প্রভাবের সঙ্গে। হতদরিদ্র ও দুস্থ মানুষদের দিতে হচ্ছে মূল্য। তাই কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনে অসংখ্য পরিবেশবাদী এই বলে স্লোগান দিয়েছিল যে, ‘এই পৃথিবী মুনাফার জন্য নয়। বাসযোগ্য আর কোনো পৃথিবীও নেই।’
আমাদের দেশের সেসব পরিবেশবাদী ব্যক্তি, যারা দীর্ঘদিন থেকে আমাদের পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করে যাচ্ছেন, তারা তাদের স্বপ্ন, আশা ও আকাঙ্ক্ষার কথাকে সাবলীলভাবে, সুস্পষ্ট প্রত্যয়ে প্রকাশ করে গেছেন। তাদেরই এক অন্যতম প্রবক্তা অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মার ৮৪তম জন্মদিবসটি পালিত হল গত ২৯ মে, যখন আমাদের প্রকৃতি রুক্ষ। পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন। নিসর্গ বিষণ্ন। দ্বিজেন শর্মা এই বৈরী পরিবেশের মাঝেও নতুন প্রজন্মকে নিয়ে যাচ্ছেন রমনা উদ্যানে তরুপল্লবের অনুষ্ঠানে। আগ্রহ সহকারে তাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন গাছগাছালির সঙ্গে। নিবিড় উদ্ভিদজগতের সঙ্গে। প্রসন্ন প্রকৃতির সঙ্গে। নিসর্গপ্রেমী, উদ্ভিদবিজ্ঞানী, সৌন্দর্যপিয়াসী এই মানুষটি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিপন্ন পরিবেশের কথা বলে উত্কণ্ঠা প্রকাশ করে গেছেন। তিনি ভাটির দেশের নানান গাছপালার সৌন্দর্যকে নিবিড়ভাবে উপভোগ করেছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতি চেতনায় গভীরভাবে আস্থাশীল। রবীন্দ্রনাথও বৈরী প্রাকৃতিক পরিবেশকে একদা সুষমামণ্ডিত করার প্রয়াসে ব্রতী হয়েছিলেন। দ্বিজেন শর্মা মুগ্ধতায় সেসব প্রয়াসের কথা জানিয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পিত শান্তিনিকেতন একসময় পরিচিত ছিল ভুবনডাঙ্গার ধূসর মাঠ হিসেবে। স্থানীয় অধিবাসীরা সেই অভিশপ্ত মাঠকে এড়িয়ে চলত। ১২ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ তার ঋষি পিতার সঙ্গে সেখানে প্রথম যান- অনুর্বর, রুক্ষ খোয়াইডাঙ্গার প্রান্তরে। তার ৬০ বছর পরে সেই স্মৃতিচারণা করেছিলেন, ‘আমার জীবন নিতান্তই অসম্পূর্ণ থাকত প্রথম বয়সে এই সুযোগ যদি আমার না ঘটত। সেই বালক বয়সে এখানকার প্রকৃতি থেকে যে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম, এখানকার অনবরুদ্ধ আকাশ ও মাঠ, দূর হতে প্রতিভাত নীলাভ শাল ও তাল-শ্রেণীর সমুচ্চ শাখাপুঞ্জে শ্যামলা শান্তি স্মৃতির সম্পদরূপে চিরকাল আমার স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।’
রবীন্দ্রনাথ ভুবনডাঙ্গার নিষ্করুণ মাঠের বৈরী পরিবেশকে নিষ্ঠার সঙ্গে নিসর্গমণ্ডিত করে তোলেন। তিনি সেই বিস্তীর্ণ প্রান্তরের বর্ণনা দিয়েছিলেন এভাবে-‘ছায়ার রৌদ্রে বিচিত্র লাল কাঁকরের এই নিভৃত জগত্ না দেয় ফল, না দেয় ফুল, না উত্পন্ন করে ফসল।’ সেরকম রুক্ষ প্রকৃতি ও পরিবেশ সচেতন মানুষের কল্যাণে পরিবর্তিত হয়। তারা এমনভাবে এক প্রসন্ন ভুবনকে সৃষ্টি করেন যে সেখানকার ছাতিমতলায় পাথরে খোদিত হয় ‘এখানে আত্মার আরাম’ বাক্যটি। প্রাণহীন, কঙ্করময় প্রান্তরকে তিনি প্রাণময় শিল্পে পরিণত করে গেছেন। শান্তিনিকেতন হয়ে উঠেছিল এক অনবদ্য নিসর্গ স্থাপত্য, যেন মরু বিজয়ের কেতন উড়েছিল সেখানে।
আজ যখন আমাদের ভূখণ্ডটি মরুকরণের বিস্তারে ক্রমশ ধূসর হয়ে আসছে, তখন দ্বিজেন শর্মার চেতনায় রবীন্দ্র প্রকৃতিচর্চার বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমরা রুক্ষতার অবসান চাই। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের অবসান চাই।
খোয়াইডাঙ্গার প্রান্তরে দেবেন্দ্রনাথ যে বীজ রোপণ করেছিলেন তাকে রবীন্দ্রনাথ পরম যত্নে লালন করেছেন। বর্ধিত করেছেন। শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত করেছেন। ফুলে-ফলে সমৃদ্ধ করেছেন। এই পরিবর্তনটি এতই স্মরণীয় যে অকুণ্ঠচিত্তে বলা চলে, ‘সেখানে মৃত্যুর মুখে ঘোষিত হয় বিজয়ী প্রাণের জয়বার্তা।’
রবীন্দ্রনাথের প্রেরণায় দিনে দিনে ঋতুতে ঋতুতে সেখানে রোমাঞ্চিত স্পন্দনের বিস্তার ঘটেছে। তাই লিখেছিলেন, ‘আমি ভালোবাসি গাছপালা, ওদের মধ্যে এই ভালোবাসার অনুভূতি প্রবেশ করে, ওদের কাছ থেকে সেই ভালোবাসারই পাই প্রতিদান।’
আমি ব্যক্তিগতভাবে অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মার প্রবল অনুরাগী। তাকে অনেকবার বলেছি-আপনি কিন্তু আমার কাছে রবীন্দ্রনাথের সেই কিশোর বলাই। যে গাছ কাটলে প্রবল যন্ত্রণা অনুভব করে।
আমার এই আবেগমথিত কথা শুনে দ্বিজেন শর্মা মৃদু হাসেন। মনে হয় আমার ধারণাটির তিনি বিরোধিতা করেন না। তিনি সঙ্কটের প্রতিবেশ বিষয়ে উত্কণ্ঠা প্রদর্শন করেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত ‘প্রকৃতি পত্রে’ থাকে সেই উত্কণ্ঠার কথা। যাতে আমাদের সাম্প্রতিক সময় ক্লিষ্ট।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমানে পৃথিবীর তাপমাত্রা হচ্ছে ৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার দরুন জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। ধনী দেশগুলোর কারণে কার্বন নিঃসরণ ঘটছে শতকরা ৫১ ভাগ। এই ভয়াবহ সমস্যার সমাধানকল্পে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে নানা আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবারই মানুষ প্রবল আশা নিয়ে তাকিয়ে থেকেছে সম্মেলনগুলোর দিকে। শুভকর ফললাভের প্রত্যাশা করেছে। কিন্তু আশার বাণী শোনা যায়নি। সমাধানের জন্য বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের প্রতি গভীর আশায় তাকিয়ে ছিলেন উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। প্রত্যাশা ছিল ভালো পরিণতির। কিন্তু সেখানেও কোনো সুরাহা হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, পৃথিবী কি তাহলে এরকম স্বেচ্ছাচারিতায় নিয়ন্ত্রিত হতে থাকবে? পৃথিবীর সকল সম্পদের ওপর সবার সমান অধিকার রয়েছে।
আমাদের দেশের প্রধান পরিবেশবাদী লেখক অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা এখনও ৮৪ বছর বয়সে উদ্যানে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে গিয়ে গাছ চেনাচ্ছে। উদ্ভিদের প্রতি ভালোবাসা জাগাচ্ছেন। এই প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মাঝে তিনি কি আল মাহমুদের মতো বলবেন, ‘লোক নেই, জন নেই পানির পাশে। গাছগুলো মনে হবে দুঃখমাখা।’

লেখক : শিশুসাহিত্যিক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন