বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১২

আমাদের গ্রহটি বাঁচাতে হবে



আ লী  ই মা ম
যখন এ লেখাটি লিখছি তখন চারপাশের প্রকৃতিতে বিরাজ করছে ভয়ানক উত্তপ্ত অবস্থা। সমস্ত দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তীব্র তাপপ্রবাহ, পুড়ছে দেশ। অসহনীয় গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। স্বাভাবিক জীবনের গতি চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উত্তপ্ত পৃথিবীর বাসিন্দা এখন আমরা। এখন বায়ুপ্রবাহে আগুনের হলকা, যেন ‘নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস’। বুঝি বৃক্ষহীন মরুভূমির মাঝে অতিবাহিত হচ্ছে আমাদের ধূসর জীবন। আর আমাদের ক্লান্ত, বিমর্ষ করছে। চারপাশ থেকে অপসৃত হয়েছে সবুজ-শ্যামলিমার প্রসন্নতা। নির্বাক, নীল, নির্মম মহাকাশ। প্রকৃতির এই ভয়ঙ্কর অবস্থা পরিবেশবিদদের চিন্তিত করে তোলে। সমস্যার উত্স অনুসন্ধানে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পরিবেশের এই ভয়াবহ দূষণের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে ব্যাপক আলোচিত গ্রিনহাউস ইফেক্টের কথা। আমাদের ভূখণ্ড একদা শ্যামল প্রকৃতিতে প্রসন্ন ছিল। উদ্ভিদের নিবিড় জগত্ প্রকৃতিকে স্নিগ্ধ করে রেখেছিল। এখন জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত তীব্র সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। প্রতিনিয়ত বিপর্যস্ত হচ্ছে আমাদের যাপিত জীবন। প্রকৃতি হয়েছে বৈরী। পরিবেশ হয়েছে রুক্ষ। নির্বিচারে বৃক্ষনিধন এই সমস্যাকে প্রকট করেছে। আমরা আত্মবিনাশী আচরণ করেছি। এ যেন বৃক্ষের ওপরে নয়, নিজের পায়েই কুড়াল মারা হয়েছে। আমাদের পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের  এই লেখার শিরোনামের বিবরণটি এখন উপহাসে পরিণত হয়েছে। বাতাস এখন তপ্ত নিঃশ্বাস। এই তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে আমরা আবার সেই বৃক্ষবন্দনায় নিবেদিত হতে চাই। অনুভব করতে চাই শ্যামলী নিসর্গকে।
বৃক্ষ পরিচর্যায় সম্রাট আশোক তার দ্বিতীয় গিরিশাসনে জানিয়েছেন, ‘যেখানে যেসব গাছ, ফলমূল নেই আমি তা অন্য জায়গা থেকে এনে লাগিয়েছি। পথের ধারে বৃক্ষরোপণ করিয়েছি। পশু ও মানুষের চিকিত্সার কাজে যেসব ভেষজ ঔষধি লাগে, তা-ও এনে লাগানো হয়েছে যেখানে নেই সেখানকার মাটিতে।’ এই উক্তি ছিল আড়াই হাজার বছর আগের। সেই শুভবোধে অনুপ্রাণিত হয়ে বন সৃজিত হয়েছিল। আমরা সেই বনাঞ্চলের চরম বিনাশ করেছি। প্রকৃতিকে বৈরী করে তুলেছি। নিষ্ঠুর হয়ে প্রকৃতি তার শোধ নিয়েছে। এখন তাপদাহে পুড়ছে দেশ।
প্রখ্যাত লেখক এইচজি ওয়েলস সম্রাট আশোকের পাথরে উত্কীর্ণ এই বাণী পাঠ করে লিখেছিলেন, একধরনের পানি, মাটি, বাতাস থেকে অন্যরকমের আবহে এই গাছপালার স্থানান্তরকরণ প্রক্রিয়ায় আশোক তার প্রথম উদ্যোক্তা হিসেবে পৃথিবীর উদ্ভিদবিজ্ঞানের ইতিহাসেও বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। বৃক্ষপ্রেমিক আশোকের কর্তব্যনিষ্ঠা আমাদের কল্যাণের জন্য অনুধাবন করা উচিত। সম্রাটের এক রানী বোধিবৃক্ষটিকে নষ্ট করে দিতে চাইছিলেন। সম্রাট যখন সংবাদ পেলেন যে মহীরুহটি মৃতপ্রায়, তখন ছুটে গেলেন তার পরিচর্যা করতে। গাছে পানি ঢেলে সতেজ করলেন। একসময় সবুজ পাতায় সেই ছায়াতরুটি ভরে উঠল। সাঁচিস্তূপের দক্ষিণ তোরণে বৃক্ষপ্রেমিক অশোকের সেই ছবিটি ধরা আছে।
আমরা কল্যাণবোধের কোনো শিক্ষাই গ্রহণ করিনি। পৃথিবীর এই বৈরী পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিত জানার চেষ্টা করেছেন পরিবেশবিদরা। দূষণের মূল কারণ কী, যাতে পৃথিবী নামক গ্রহের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠছে। ’৭৩ সালে রিয়োতে অনুষ্ঠিত প্রথম ধরিত্রী সম্মেলনের মূল স্লোগান ছিল, আমাদের গ্রহটিকে রক্ষা করুন।
প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে মানুষের সংগ্রাম দীর্ঘদিনের। প্রায় দুই লাখ বছর আগে আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে বিলুপ্তির মুখে পড়া পৃথিবীর অবশিষ্ট সামান্য কিছু মানুষ সম্ভবত ছোট্ট একটি জায়গায় আশ্রয় নিয়ে জীবন রক্ষা করেছিল। আর এভাবেই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায় মানবজাতি। কয়েকজন বিজ্ঞানী জায়গাটিকে ডাকছেন ‘হেভেন অব ইডেন’ বা স্বর্গোদ্যান নামে।
নতুন এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, গুটিকয়েক মানুষ যে অনুকূল জায়গাটিতে আশ্রয় নিয়ে বরফযুগের প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে বেঁচে যায়, তার অবস্থান আফ্রিকার দক্ষিণ উপকূলে, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের প্রায় ২৪০ কিলোমিটার দূরে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, ১ লাখ ৯৫ হাজার বছর আগে পৃথিবীর তাপমাত্রার আকস্মিক পরিবর্তনে বিশ্বের অন্যত্র নানা প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাদের ধারণা, অন্য প্রজাতির প্রাণীর তুলনায় মানুষের জেনেটিক বৈচিত্র্য কম হওয়ার এটি একটি সম্ভাব্য কারণ। কয়েকজন বিজ্ঞানীর ধারণা, ওই সময় পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা মাত্র কয়েকশ’তে নেমে এসেছিল। পৃথিবীতে পালা করে সর্বব্যাপী শৈত্যের বরফযুগ এসেছে, যার সর্বশেষটি ঘটেছিল আজ থেকে হাজার দশেক বছর আগে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির দি ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান অরিজিনসের অধ্যাপক কার্টিস মারিয়েন দক্ষিণ আফ্রিকার ‘পিনাকল পয়েন্ট’ নামে পরিচিত সমুদ্র উপকূলবর্তী ওই প্রত্যন্ত জায়গায় গুহার মধ্যে প্রাচীন মানুষের ব্যবহূত কিছু জিনিস আবিষ্কার করেছেন।
অধ্যাপক মারিয়েন বলেন, ‘হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতির মানুষের বিকাশ শুরু হওয়ার কিছু সময় পরই বিরূপ জলবায়ু মানবজাতিকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল।’ তিনি বলেন, সাম্প্রতিক পাওয়া কিছু তথ্যে এ ইঙ্গিত মিলছে যে, টিকে যাওয়া ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠী থেকেই বর্তমান মনুষ্য জাতির উদ্ভব। তারা আফ্রিকার ওই ক্ষুদ্র জায়গাটিরই সম্পদের দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে বেঁচে ছিল। নিকটস্থ সাগর এবং এলাকাটির সমৃদ্ধ উদ্ভিদজগত্ ছিল তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যের একটি বড় উত্স। মারিয়েন বলেন, গুহাগুলোয় কমপক্ষে ১ লাখ ৬৪ হাজার বছরের পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে।
লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের মানবজাতির উদ্ভব সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ ক্রিস স্ট্রিঙ্গার বলেন, প্রাচীন মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ সম্পর্কে অধ্যাপক মারিয়েনের তত্ত্বের সঙ্গে তিনি একমত। তবে ক্ষুদ্র একদল মানুষ আধুনিক মানবজাতির উত্স-এই বক্তব্য তিনি পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছেন না।
অনেক গবেষকেরই ধারণা, প্রায় ১ লাখ ৯৫ হাজার বছর আগে পূর্ব আফ্রিকায় আধুনিক মানুষের উদ্ভব ঘটে। ৫০ হাজার বছরের মধ্যেই তারা মহাদেশের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।
ধারণা করা হয়, ৭০ হাজার বছর আগে এক শুষ্ক যুগে লোহিত সাগরের পানির স্তর নেমে গিয়েছিল। সাগরের মুখ সঙ্কুচিত হয়ে ১৮ মাইল থেকে ৮ মাইলে নেমে আসে। আর এ সুযোগে একটি জনগোষ্ঠী সাগর পাড়ি দিয়ে আফ্রিকা থেকে আরবে প্রবেশ করে। পরিবেশ দূষণের কারণে বহু সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটেছিল। আমাদের তাই অবহিত হতে হবে কী কারণে অতীতের সভ্যতা নিশ্চিহ্ন হয়েছে। সিন্ধু সভ্যতার অন্তর্ধানের কারণ হিসেবে সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ক্রমবর্ধমান ঊষরতা এর জন্য দায়ী। আমাদের ভূমিতেও যে রকম মরুকরণ প্রক্রিয়া চলছে তাতে আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নদীগুলো যাচ্ছে শুকিয়ে। বিস্তৃত হচ্ছে বালির চরা। সিন্ধু সভ্যতা অবলুপ্তির কারণ অনুসন্ধানে লবণাক্ত হ্রদ থেকে পাওয়া পরাগরেণুর নমুনা গবেষণা করে বলা হয়েছে যে, প্রায় ২২৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ কমে আসার ফলে আবহাওয়া শুষ্ক হতে শুরু করেছিল। যে জন্য নদীগুলো শুকিয়ে গিয়েছিল। সিন্ধু লোকালয়ে বিপুল পরিমাণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘনিয়ে এসেছিল, যার আঘাত সেই সভ্যতা আর সামলে উঠতে পারেনি। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মানুষের সৃষ্ট ছিল সেই বিপর্যয়। সিন্ধুর মানুষজনের বেপরোয়া ভূমি কর্ষণ, ক্রমবর্ধিত চারণক্ষেত্রের ব্যবহার, অরণ্যাদি বিনষ্ট করায় ক্ষতি ত্বরান্বিত হয়েছে। এর পরিণতিতে সে স্থানের মৃত্তিকা সে সময়ের জনগোষ্ঠীকে আর জীবনযাপনের উপকরণ সরবরাহ করতে পারেনি।
পৃথিবীর সাম্প্রতিক বৈরী পরিবেশের কারণ হিসেবে পরিবেশবিদরা দায়ী করছেন মাত্রাতিরিক্ত কার্বন যৌগের ব্যবহার, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে। মানুষের সৃষ্ট নানা কারণে এখন পরিবেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জীববৈচিত্র্য প্রচণ্ড হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়েছে। মলিন বাতাসে, বিষণ্ন পরিবেশে কালাতিপাত করতে করতে আমরা এই সমস্যার ভয়াবহ রূপকে প্রত্যক্ষ করছি। এই তাপপ্রবাহ যেন মুক্ত, বিশুদ্ধ স্নিগ্ধ বাতাসকে অপসৃত করেছে। এখন শ্বাস নিতে কষ্ট। পরিস্রুত পানি দুর্লভ হয়ে উঠছে। সঠিকভাবে বাতাস আর পানি পাওয়া না গেলে জীবন স্বাভাবিকভাবেই নিরানন্দ হয়ে ওঠে। আমরা এখন সেই নিরানন্দকাল অতিক্রম করছি। অবস্থান করছি বিমুখ প্রান্তরে। পার্থিব জগতের সবকিছুর মাঝে বাতাসের সঙ্গেই আমাদের সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক। বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে বাতাস এবং পানি। যার সরবরাহে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে উদ্ভিদজগতের তৈরি প্রতিবেশ ব্যবস্থা। আমাদের অস্তিত্ব নির্ভর করছে পানি আর বাতাস এই দুটো জড়বস্তুর ওপর। প্রসন্ন বাতাসকে ঘিরে প্রাণ সজীবতা পায়। প্রতিদিন পানি ও বাতাসের সঙ্গে জগত্সংসারের সকল প্রাণী এবং উদ্ভিদের আলিঙ্গন ঘটছে পরম বন্ধুর মতো। বাতাস নিয়ে আসছে ফুলের সৌরভ। পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণসত্তাকে জড়িয়ে রেখেছে বায়ুমণ্ডলের একটি পুরু চাদর। সেই পৃথিবী এখন প্রতিনিয়ত উত্তপ্ত হচ্ছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড জমা হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে। সূর্যের আলো আমাদের পৃথিবীর তাপ বাড়িয়ে দেয়। পৃথিবী সেই তাপকে বিকিরণ করে একটা সাম্য অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা করে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে জমে থাকা অজস্র  বর্জ্য কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও ধুলোবালি সেই বিকীর্ণ তাপের অনেকটাই ধরে রাখে। কিন্তু কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ যত বেড়ে যাবে তার তাপ ধরে রাখার ক্ষমতা তত বেড়ে চলবে, ফলে সমস্ত পৃথিবী আরও বেশি উষ্ণ হবে। এটাই গ্রিনহাউস ইফেক্ট।
পৃথিবীতে আবহাওয়ার গতিবিধি খুবই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণও দিনের পর দিন বদলে যাচ্ছে। পরিবর্তিত হচ্ছে বায়ুপ্রবাহের পথনির্দেশ। পৃথিবীপৃষ্ঠের ওপরের ওজোন স্তর পাতলা হয়ে আসছে। কোথাও ফুটো হয়ে গেছে। ওজোন স্তর থাকার ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করতে পারে না। এই আলো এসে পৃথিবীতে আছড়ে পড়লে জীবজগতের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে।
রেফ্রিজারেটরে ব্যবহূত রাসায়নিক বস্তু সিএফসি ওজোন স্তরকে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ওজোন স্তর ফুটো হয়ে যাওয়াতে পৃথিবীর পরিবেশ এত বেশি উত্তপ্ত হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, গত দুই শতাব্দীতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় শূন্য দশমিক ছয় ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। আবহাওয়াতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। শুধু গত চার দশকেই এর এক-তৃতীয়াংশ বেড়েছে। বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী এ শতাব্দীর শেষে সুমেরু অঞ্চলে স্থলভাগের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এর ফলে বরফ গলে প্লাবিত হবে সমুদ্র বা নদী উপকূলবর্তী বেশ কিছু অঞ্চল।
প্রখ্যাত পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. ওয়ালেস ব্রোকার মন্তব্য করেছিলেন, ‘আবহাওয়া যেন একটা ক্ষ্যাপা জন্তু। আর মানুষ তাকে ক্রমাগত খুঁচিয়ে চলছে একটা ছুঁচালো লাঠি দিয়ে। কিয়োটো চুক্তি অনুযায়ী কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা মিথেনের মতো কিছু গ্যাসের উত্পাদন কমানোর কথা পৃথিবীর সব দেশের। এই গ্রিনহাউস গ্যাস পৃথিবীর আবহাওয়াতে একটা আস্তরণ তৈরি করে। তার ফলে পৃথিবীর তাপ দূরাকাশে বিকীর্ণ হতে পারে না।
কিয়োটো প্রটোকল এখন অনেক উন্নত দেশই মানছে না। তারা পৃথিবী নামক গ্রহের সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে ভাবছে না। তাদের আচরণ আত্মকেন্দ্রিক। বিশ্বায়নের সুযোগে বহু দেশ তাদের নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য পৃথিবীর বিশাল এক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকে বিপন্ন করে তুলছে। 
ধনী দেশগুলোর ভোগবিলাস সামগ্রীর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট যে সিএফসি ওজোন স্তরকে বিপন্ন করে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটাচ্ছে তা এখন নৈতিকতার দিক থেকেও প্রশ্নবিদ্ধ। আবহাওয়াজনিত পরিবর্তনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের খেসারত দিতে হচ্ছে অগুনতি মানুষকে। রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ বিষয়ক পরামর্শক সংস্থার প্রধান অধ্যাপক কেভিল ট্রেনবার্থ সম্প্রতি বলেছেন, পৃথিবীতে বেশ কয়েকটি জায়গায় হারিকেন ঘূর্ণিঝড়ের অন্যতম কারণ পৃথিবীর আবহাওয়া বদল। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের বিপদ অন্যরকম উপলব্ধির সৃষ্টি করছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের বিপদে জন্য মূল দোষী হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে কার্বনভুক্ত পদার্থের উপস্থিতি। পরিবেশদূষণ হচ্ছে আধুনিক পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা। সাধারণ মানুষও এখন পরিবেশ নিয়ে নানা চিন্তাভাবনা করছে। বলা চলে করতে বাধ্য হচ্ছে। গ্রিনহাউস ইফেক্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। ওজোন স্তরের পর্দাকে প্রতিনিয়ত পাতলা করে চলেছে সিএফসি, যেন পৃথিবীর আকাশের পর্দা ফেটে চৌচির হতে চলেছে। নানা প্রক্রিয়ায় দূষিত হচ্ছে নরম মাটি, নদী-নালা, সাগরের পানি, বায়ুপ্রবাহ।

এখন তাই আর্তকণ্ঠে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে- 
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু 
নিভাইছে তব আলো, 
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ 
তুমি কি বেসেছ ভালো?
লেখক : শিশুসাহিত্যিক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন